• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের দুই ইউপি নির্বাচনে নৌকা পেতে মরিয়া ছয় বিতর্কিত নেতা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ১১:০৪ এএম;
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের দুই ইউপি নির্বাচনে নৌকা পেতে মরিয়া ছয় বিতর্কিত নেতা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের দুই ইউপি নির্বাচনে নৌকা পেতে মরিয়া ছয় বিতর্কিত নেতা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরমার্টিন ও চরকাদিরা ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকজন অযোগ্য ও বিতর্কিত প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়নটি মেঘনানদী বেষ্টিত দুর্গম চর এলাকা। অন্যদিকে চরকাদিরা ইউনিয়নটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও নোয়াখালীর সদর উপজেলার সিমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে নানা শংকা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের মাঝে। বিগত দিনের মত নির্বাচনে বহিরাগত অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসী এনে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত করা হলে রক্তপাতের আশংকা ভোটারদের। অতীতের ইতিহাসে থেকে সামনের নির্বাচনেও এমন শংকা নিয়ে সমালোচনা চলছে এ দুই ইউনিয়ন ব্যাপী। তবে বর্তমান জেলা-উপজেলা প্রশাসনের শক্ত -নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্লিন- ইমেজের প্রার্থী চান এলাকাবাসী। এবারের নির্বাচনে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের দৌড়ঝাঁপ দেখে মানুষ ভোটের প্রতি অনেকটা অনিহা প্রকাশ করছেন।.

চরমার্টিন ইউনিয়নে গত নির্বাচনে বহিরাগত অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসী এনে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত করা, নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে  সিলমারার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে পাশ করার পুণরাবৃত্তি হলে এবার রক্তপাতের আশংকা ভোটারদের। চরমার্টিন ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন আব্বাস উদ্দিন, ইউছুফ আলী মিয়া,জিয়া উদ্দীন ফারুক,আনিছুর রহমান,আলমগীর সারওয়ার প্রমুখ। ইউছুফ আলী মিয়া  চেয়ারম্যান হয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার চালান। দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন,বিচারের নামে অবিচার ও নানা শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে দুর্বব্যবহার,গায়ে হাত তোলা সহ নানা হুমকিতে আতংকিত ছিল ইউনিয়নবাসী। বিচারের নামে প্রহসনের জন্য একবার তাকে উচ্চ আদালত কতৃক তলব করে সতর্কতা প্রদান করা হয়।তার চরম অহমিকা ও দুর্ব্যবহারের কারণে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এলাকার জনগন ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আওয়ামী নেতাকর্মীরা জানান, এই বিতর্কিত ব্যক্তিকে নৌকার টিকেট পাইয়ে দিলে এবার নৌকার ভরাডুবি সুনিশ্চিত।.

জনবিচ্ছিন্ন এই ব্যক্তি এখন আবারো নৌকার টিকেটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পুর্বেই এখন জনগনের আপনজন সাজার জন্য গ্রামের পাড়া মহল্লায় জনবিচ্ছিন্ন গনসংযোগ করতে দেখা গেছে তাকে। তবে জনগনের তেমন সাড়া পাচ্ছেনা বলে জানান তার কয়েকজন অনুসারী। আব্বাস উদ্দিন : একজন ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা। চরমার্টিন ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। দল তাকে নমিনেশন দিলে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখের একজন জনপ্রিয় নেতা তিনি। দলীয় কর্মসূচিতে নানা দান-অনুদান দিয়ে চরমার্টিন ইউনিয়নে আওয়ামী রাজনীতিকে সংগঠিত করেন আব্বাস। তৃনমুল নেতাকর্মী- ভোটারদের পছন্দ ও ক্লীন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে আব্বাস উদ্দিনকে চায় এলাকাবাসী। তাকে একজন জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করেন ভোটাররা। চরমার্টিন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আব্বাসের আলোচনা সবার শীর্ষে। দলীয় মনোনয়ন পেলে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবেন এই নেতা এমনটাই মনে করেন তার অনুসারীরা। জিয়া উদ্দীন ফারুক: ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে উঠে আসলেও কর্মজীবন শুরু করেন এলাকার বাইরে। কালেভদ্রে দেখা গেলেও এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার নেই কোনো ভূমিকা। ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে এলাকায় না পেয়ে মানুষ তাকে অনেকটা বসন্তের কোকিল মনে করছেন। জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। আলোচনা শুন্যের কোটায়।.

আনিছুর রহমান : ইউপি সদস্য থেকে এবার চেয়ারম্যান হবার স্বপ্ন দেখছেন আনিছুর রহমান প্রকাশ হৃদয় মেম্বার। একটি ওয়ার্ড এলাকায় পরিচিত থাকলেও অন্য ওয়ার্ডগুলোতে নেই তেমন পরিচিতি। তার উপর রয়েছে আনিছুরের ব্যক্তিগত সামাজিক নেতিবাচক দুর্নাম। মেম্বার নির্বাচিত হয়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন এলাকার এক গৃহবধূর সাথে।এই নিয়ে তিনি একজন বিতর্কিত ও জনশূন্য ব্যক্তি। আলমগীর সারওয়ারঃ একেবারেই নতুন মুখ। তার অবস্থান এলাকার বাইরে হওয়ায় সাধারণ ভোটার সহ আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে বরাবরই অচেনা। ইউনিয়নটির অধিকাংশ মানুষ তাকে চিনে না। অন্যদিকে চরকাদিরা ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন ওমর ফারুক ভুঁইয়া, ইব্রাহিম বাবুল মোল্লা, নুরুল ইসলাম ,মনিরুল ইসলাম রিপু, আশ্রাফ উদ্দীন রাজু, একেএম ফজলুল হক মানিক হাওলাদার প্রমুখ। আশ্রাফ উদ্দীন রাজু : চরকাদিরা ইউনিয়নের এবারের নির্বাচনে একজন বিতর্কিত আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রার্থী। একসময়ে চরাঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করে ঐ এলাকায় চুরি ডাকাতি ছিনতাই সহ নানা অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে নৌকার টিকেটে তিনি একবার চেয়ারম্যান হন। চেয়ারম্যান হয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার চালান।.

এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও থানার পুলিশ অফিসার সহ নানা শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে দুর্বব্যবহার,গায়ে হাত তোলা সহ নানা হুমকিতে আতংকিত ছিল উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন। তার চরম অহমিকা ও দুর্ব্যবহারের কারণে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তারা। পরবর্তী নির্বাচনে নৌকার টিকেট এনেও চেয়ারম্যান হতে পারেননি রাজু। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানান, এই বিতর্কিত ব্যক্তিকে নৌকার টিকেট পাইয়ে দিলে সে এলাকায় এসে ঘোষনা দেয় যে,এক কোটি টাকার বিনিময়ে নৌকা পেয়েছি। ভোট দিলেও আমি চেয়ারম্যান,না দিলেও আমি চেয়ারম্যান। নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্র ঢুকতে দেওয়া হবেনা। তার এমন হুমকি চরকাদিরা ইউনিয়নের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে।.

লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে ঐ এলাকার প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহকে হাতপাখা প্রতীকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।জনবিচ্ছিন্ন এই ব্যক্তি এখন আবারো নৌকার টিকেটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। তবে কোন প্রকারে নৌকার টিকেট নিতে পারলে আবারো দ্বিতীয় বারের মত নৌকার ভরাডুবি সুনিশ্চিত বলে মনে করেন তৃনমুল নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে চেয়ারম্যান হতে না পেরে রাজু গত ৫ বছরে চরকাদিরা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ -দল ও নেতাকর্মীদের সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পুর্বেই এখন জনগনের আপনজন সাজার জন্য গ্রামের পাড়া মহল্লায় জনবিচ্ছিন্ন গনসংযোগ করতে দেখা গেছে। তবে জনগনের তেমন সাড়া পাচ্ছেনা বলে জানান তার এক অনুসারী। গত নির্বাচনে হেরে গিয়ে চেক জালিয়াতি সহ একাধিক মামলায় কয়েক দফায় আত্মগোপন ও কারাবরণ করে এখন জামিনে রয়েছেন। নুরুল ইসলাম : আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি করে রাখেন। তার সাথে রাজনীতি করা সফিক উল্লাহ ও ডাঃ হারুন অর রশীদকে এক ঘরোয়া করে নেতৃত্ব তার হাতে নেন। এতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে চরকাদিরা ইউনিয়নে দলটির মধ্য নানা কোন্দল গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। দলীয় কর্মসূচি ও জাতীয় দিবসগুলোতে নুরুল ইসলাম নিজের আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নামসর্বস্ব কর্মসুচি পালন করে ।.

এতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তার থেকে অনেকটা দুরে সরে যায়।বর্তমানে চরকাদিরা ইউনিয়নে গুটিকয়েক হাতেগোনা ২০-২২ জনের মতে লোক ছাড়া তার পিছনে কোন নেতা-কর্মীকেই দেখা যাচ্ছেনা। অভিযোগ উঠে, নৌকার টিকেট পাইয়ে দিবে আশ্বাস দিয়ে সাবেক বিএনপি নেতা ইব্রাহিম বাবুল ও আওয়ামীলীগ নেতা ওমর ফারুক ভুঁইয়ার কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে এখন নিজেই চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বেড়ান নুরুল ইসলাম সাগর। আর এতে ইব্রাহিম বাবুল ও ওমর ফারুক ভুঁইয়া ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন নুরুল ইসলামের প্রতি। ইব্রাহিম বাবুল: পেশায় একজন ব্যবসায়ী। জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে করতেন বিএনপির রাজনীতি। .

সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের শেষ সময়ে এসে আওয়ামীলীগে যোগ দেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে দলে আনেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সাগর । বিনিময়ে ইব্রাহিম বাবুলের কালোটাকার লোভে পড়েন নুরুল ইসলাম। গ্রহন করেন নানা সুবিধা। অসহায় হয়ে পড়েন ইব্রাহিম বাবুল। ওমর ফারুক ভুঁইয়া : একজন ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতা। চরকাদিরা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। দল তাকে নমিনেশন দিলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দুদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখের একজন জনপ্রিয় নেতা তিনি । দলীয় কর্মসূচিতে নানা দান অনুদান দিয়ে চরকাদিরা ইউনিয়নে আওয়ামী রাজনীতিকে সংগঠিত করেন ফারুক।তৃনমুল নেতাকর্মী-ভোটারদের পছন্দ ও ক্লীন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে ওমর ফারুক ভুঁইয়াকে চায় এলাকাবাসী। তিনি একজন জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করেন ভোটার ও তার অনুসারীরা। মনিরুল ইসলাম রিপুঃ ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে তিনিও আলোচনায় রয়েছে।.

তবে তার পিতা মোহাম্মাদুল্লাহ মিয়া কমলনগর উপজেলা বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নানের আস্থাভাজন লোক। অনেকেই তার পিতার দল বিকল্পধারার বাংলাদেশের কারনে রিপুকে নিয়ে কানাঘুষা করছেন সব মিলিয়ে উপজেলার এ দুটি ইউপি নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী চান এলাকাবাসী। কোন অবস্থাতেই অসৎ-দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ-অযোগ্য ও বিতর্কিত লোক যাতে নৌকার মনোনয়ন না পায়,সেজন্য তৃনমুল নেতাকর্মীরা দাবী করে আসছেন।তাদের দাবী যারা নুন আন্তে পান্তা ফুরায় তারা এখন সহায় সম্বল বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে নৌকার টিকেট ভাগিয়ে আনার জন্য কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে? তা গভীর চিন্তার বিষয়।.

এরা কোটি টাকা খরছ করে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান হয়ে জনগনের সম্পদ লুটপাট করবে।গরীবের জন্য আসা বরাদ্দ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে জিরো থেকে হিরো হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । মনোনয়ন দিতে জেলা-উপজেলা নেতারা এসব লোকগুলোর আমলনামা আগে দেখার অনুরোধ করেন চরকাদিরা ও চরমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃনমুলের নেতাকর্মীরা। নচেৎ এ দু ইউনিয়নে আবারো নৌকার ভরাডুবি হবে বলে জানান তারা।
 . .

ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি):

রাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ